সব
অভিযোগ রয়েছে এ দুটি চক্র স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তাকর্মীদের ‘ম্যানেজ’ করে বহির্নোঙরে থাকা বিদেশি জাহাজ থেকে তেল চুরি করছে। আইনশৃখলা বাহিনী মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়, জব্দ করে চোরাই তেল। এতে দু-একদিন চুরি বন্ধ বা কমলেও আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। চলতে থাকে তেল চুরি।
চোরচক্র সক্রিয় থাকার বিষয়ে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশের ওসি মোহাম্মদ একরামুল্লাহ বলেন, “তেল চুরির ঘটনায় ফেব্রুয়ারি মাসে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুটি ঘটনায় নৌপুলিশ সদস্যদের দেখে চোরচক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ নৌকায় থাকা ৫০০ লিটার তেল জব্দ করে।
ওসি জানায়, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তেল চুরির ঘটনায় আটকরা জানিয়েছেন, তারা কর্ণফুলী নদী অথবা বহির্নোঙরে তেল নিয়ে আসা জাহাজ থেকে নাবিকদের সহযোগিতায় তেল সংগ্রহ করেন। আবার নিজস্ব ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া তেলও অনেক সময় লাইটার জাহাজ নাবিকরা কম দামে বিক্রি করে। আমদানি করা ভোজাতেলও একইভাবে জাহাজের নাবিকদের সহযোগিতায় সংগ্রহ করেন।
থানা পুলিশের তথ্য অনুসারে, জাহাজ থেকে তেল চুরির ঘটনায় সদরঘাট নৌ থানায় ২০২২ সালে ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় প্রায় ১৫ হাজার ১৪০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬০০ লিটার ভোজ্যতেল ও তিন হাজার ৫৪০ লিটার ডিজেল ছিল। এর বাইরে চলতি বছরের দুই মাসে তিনটি মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর চরপাথরঘাটা এলাকার তোতার বাপের ঘাটের কিনারা থেকে চোরাই তেলসহ দুজনকে আটক করে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ২৮০ লিটার ডিজেল উদ্ধার করা হয়।
সদরঘাট নৌথানা পুলিশ ছাড়াও জাহাজ থেকে তেল চুরির ঘটনায় নগরীর কর্ণফুলী, পতেঙ্গা এবং ইপিজেড থানায়ও বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। তেল চুরির ঘটনায় ২০২২ সালে কর্ণফুলী থানায় ৩টি মামলা করা হয়। এসব ঘটনায় এক হাজার ৩৪০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৬০০ লিটার ছিল ভোজ্যতেল।
জানতে চাইলে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) কো-কনভেনার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আগে বড় আকারে চুরি হতো; এখন ছোট আকারের চুরির ঘটনা বেশি ঘটছে। মাদার ভেসেলে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করতে যেসব ইঞ্জিন নৌকা যায়, সেগুলোর মাধ্যমে ড্রাম ভর্তি করে তেল পাচার হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর পতেঙ্গা, ইপিজেড, কর্ণফুলী, সদরঘাট ও বন্দর এলাকাকে ঘিরে তেল চোর সিন্ডিকেটের তৎপরতা চলে। বিদেশে থেকে তেলসহ খাদ্যপণ্য নিয়ে আসা জাহাজ থেকে তেল সংগ্রহ করে এসব এলাকায় মজুদ করা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কিছু অসাধু নাবিক। জাহাজে থাকা নাবিক এবং অন্য স্টাফদের জন্য খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে পৌঁছে দেওয়ার নামে বহির্নোঙরে ভাসমান জাহাজ থেকে ড্রামে ভরে তেল নামানো হয়। পরে ওই তেল ভাউচার করে খোলা বাজারে বিক্রি করে।
অনেক সময় জাহাজ থেকে তেল সংগ্রহ করে ইপিজেড এলাকার হারুনুর রশিদ। চক্রের নিজস্ব গোপন ডিপোতে মাটির নিচে ট্যাংকে লুকিয়ে রাখে। পরে সুবিধাজনক সময়ে স্থানীয় পেট্রোল পাম্প, ইঞ্জিনচালিত বোট এবং লাইটার জাহাজে বাংকারিং করা হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডায়েল লিমিটেডের তেল জাহাজে করে সারা দেশে পরিবহনের সময় চুরি করে। তেল লোড করে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ডিপোতে যাওয়ার সময় ছোট ছোট মোটর লাগিয়ে ড্রাম ভর্তি করা হয়। পরে সমুদ্রের উপকূলে এনে খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়।
সিন্ডিকেট খুব সক্রিয়। এ দুটি সিন্ডিকেটই দীর্ঘদিন ধরে তেল চুরির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর একটি সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন কর্ণফুলী থানার জুলধা ইউনিয়নের আব্দুস শুক্কর। তিনি কর্ণফুলী নদীর তীরে পিবিএম নামক ইটভাটা নিয়ে রাতের অন্ধকারে চোরাই তেল নদী থেকে তীরে উত্তোলন করেন। তেল ব্যবসা পরিচালনার জন্য নাকি নদীর দুটি ঘাটের ইজারাও নিয়েছেন তিনি। ২০০০ সাল থেকে তেল চুরি করে পাচার করেন তিনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পর্যায়ক্রমে তেল চোর চক্রের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ। পতেঙ্গা গুপ্তাখাল ডিপো এলাকাসহ বঙ্গোপসাগরের চোরাই তেলের বড় একটি অংশই তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্য সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেন।
অন্যদিকে হারুনুর রশিদের নেতৃত্বাধীন চক্রটি বালুবাহী বাজ দিয়ে তেল পাচার করেন। এমডি তানিশা নামে তার একটি জাহাজ আছে। অভিযোগ রয়েছে এই জাহাজে করেই তেল চোরাকারবারসহ বিভিন্ন অভিযোগে হারুনুর রশিদের নামে নগরীর পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানায় অন্তত চারটি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি এমডি তানিশা জাহাজ থেকে ১১ হাজার লিটার চোরাই ভোজ্যতেল উদ্ধার করে নৌথানা পুলিশ। এ ঘটনায় হারুনুর রশিদসহ তার ভাইয়ের নামে একটি মামলা করা
জানতে চাইলে আব্দুস শুরুর বলেন, তেল পাচারের সঙ্গে আমি জড়িত নাই। পারিবারিক জায়গা জমির বিরোধ নিয়ে একাধিক মামলা আছে। তবে জাহাজের তেল পাচারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। মেঘনা অয়েল থেকে আমি লাইসেন্স নিয়েছি। এই লাইসেন্সের বিপরীতে আমি তেল ব্যবসা করি।
মন্তব্য